সানগ্লাস পর্ব-৩ নিতু
একটা ঢ্যাঙ্গা লোক, হাতে লাঠি নিয়ে নাদিমের চারপাশে ঘুরছে। চোখে তীব্র সন্দেহ নিয়ে মাঝে মাঝে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে আর ঘুরে ঘুরে একটাই প্রশ্ন করছে, "কে তুমি? তামিম সেজে ঢুকেছিলে কেন?"
নাদিম যতই বলছে, সে তামিম সেজে ঢোকেনি, তাকে ভুল বুঝে তামিম বানিয়ে দেয়া হয়েছে, কিন্তু লোকটা মনে হয় না সে কথার এক বর্নও বিশ্বাস করছে। শুধু চরকির মতো ঘুরে যাচ্ছে। নাদিম চোখ বুজে ফেলল। তার মাথা ঘুরছে। ভয় হচ্ছে, হাতের লাঠিটা দিয়ে বাড়ি না দিয়ে ফেলে!
সে এই ঘরে ঢোকার পরপর যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল তা অস্তমিত হয়েছে ঠিক পর মুহূর্তে। অনেকেই চিনে ফেলেছে৷ এক বয়ষ্ক ভদ্রলোক চিন্তিত মুখে বললেন, "ওমা তামিম! তোমার চেহারা অমূল বদলে গেল কেমন করে?"
আরেকজন বলেছে, "ও তামিম নয়।"
সাথে সাথে চারদিকে রব উঠে গেছে, "তামিম নয়, তামিম নয়।"
অতঃপর দোতলা থেকে এই লোককে খবর দেয়া হয়েছে। তিনি এসেছেন সরেজমিনে তদন্ত করতে। বোধহয় পুলিশ-টুলিশ হবেন। কিন্তু তা হলে বলতে হবে খুবই বাজে রকমের পুলিশ!
লোকটা অন্য জবাব না পেয়ে এতক্ষণে জিজ্ঞেস করল, "তুমি তামিম না হলে বলোনি কেন সেটা?"
"লোকটা শুনতেই চাইল না।"
"কোন লোক?"
"ওইযে জি-জি-জিবরান সাহেব। উনিই আমাকে তামিম তামিম করে ভেতরে ঢুকিয়েছেন। আমার কথা শুনতেই চাননি।"
"জিবরান? কোথায় জিবরান? এই জিবরান...এদিকে এসো তো..."
জিবরান সাহেব এলেন মিনিট পাঁচেক পরে। তার বুকের কাছটা ভিজে চুপচুপে হয়ে শরীরের সাথে পাঞ্জাবি সেঁটে আছে। পানের পিক যায়নি।
তিনি এসেই বললেন, "একি! তামিমকে দাঁড় করিয়ে রেখেছ কেন এখনো?"
"ও তামিম নয়।" ধমকের সুরে বলল ঢ্যাঙ্গা লোকটা। "তুমি ঢুকিয়েছ ওকে?"
"মানে হ্যাঁ-!"
"ও কি বলেনি ও তামিম নয়?"
জিবরান বলল, "না তো!"
নাদিম সাথে সাথে জিজ্ঞেস করল, "আমি কি বলেছিলাম আমি তামিম?"
জিবরান মনে করার চেষ্টা করল। তারপর কাচুমাচু হয়ে বলল, "না।"
"তাহলে বুঝলে কী করে ও তামিম?"
লোকটা আরও সংকুচিত হয়ে বলল, "এত সুন্দর ছেলেটা! তামিমও তো তেমনই। ছবি দেখেছিলাম।"
ঢ্যাঙ্গা লোকটা নাদিমের দিকে চেয়ে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বলল, "তা ঠিক! চেহারা সুরতে মিল আছে। কিন্তু তাই বলে তামিম তো নয়। আর একটা গাধাও বুঝবে কেউ বিদেশ থেকে এভাবে আসে না!"
নাদিমের একটু লজ্জা লাগল। সে পরিপাটি হয়েই থাকে। কিন্তু আজ সকাল থেকেই তাড়াহুড়োয় সব জট পাকিয়ে গেছে। নইলে বেশভূষা নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারত না।
ঢ্যাঙ্গা লোকটার চোখে এখনো অবিশ্বাস। নাদিম তাড়াতাড়ি বলল, "এইযে এই মেয়েটাকেও বলেছি আমি তামিম নই।"
লোকটা সেই অষ্টাদশীর দিকে চেয়ে হুঙ্কার দিয়ে উঠল, "কিরে টুসী! ও তোকে বলেছিল কিছু?"
টুসীও চুপসে গিয়ে বলল, "হ্যাঁ! কিন্তু আমি ভেবেছিলাম মজা করছে!"
"বাহ বাহ! গর্ধবের দল নিয়ে বাস করি আমি। কবে যেন চোর তোদের সামনে দিয়ে এসে আলমারি খুলে সব জিনিস নিয়ে যাবে তোরা বুঝতেও পারবি না!"
ফর্সামতো জিবরান লোকটার মুখ লাল টকটকে হয়ে গেছে। তার বউ পাশেই দাঁড়িয়ে। সে নিজেও ভুল করেছে, তাই বোধহয় আতঙ্কে আছে, কখন তার নাম বলে ফেলবে নাদিম।
ঢ্যাঙ্গা লোকটা বলল, "তোমাকে তবু আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না। কী উদ্দেশ্যে ঢুকেছিলে পরিষ্কার হয়নি।"
নাদিম অবশেষে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "আমি এসেছিলাম আতাউর রহমান আঙ্কেলের শেষকৃত্যে।"
কথাটা মুখ থেকে পড়তে না পড়তে চারদিকে বিষ্ময়ের সুর ছেয়ে গেল। মেয়েরা মুখ চাপা দিল, পুরুষদের ভুরু কুঁচকে গেল। সামনের লোকটা তো রেগে আগুন। "কী বললি? চাচার শেষকৃত্য মানে? পাগল ছাগল নাকি? যে বেঁচে আছে তার শেষকৃত্য হবে কেন? যত্তসব ফালতু কোথাকার! সত্যি করে বল কেন ঢুকেছিস বাড়িতে?"
এতক্ষণে এটা পরিষ্কার হলো যে আতাউর রহমান মারা যাননি। বাবাকে কেউ নিশ্চিত ভুল খবর দিয়েছে। তার ফলে এত কান্ড! কিন্তু বিপদ বাড়ল দেখা যাচ্ছে। ঢ্যাঙ্গা লোকটা এতক্ষণ তুমি করে বলছিল, এখন তুই এ নেমে এসেছে। কী করা যায়?
নাদিম চট করে পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ বের করল। তা থেকে ন্যাশনাল আইডি কার্ড বের করে দেখাল। "এই দেখুন৷ আমি আসল লোক। আমার বাবা নাজমুল হাসানের বন্ধু আতাউর আঙ্কেল। কেউ বাবাকে ভুল খবর দিয়েছে আতাউর আঙ্কেল মারা গেছেন। সেজন্যই আমি এসেছি। সত্যি বলছি। খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে আমি দিনে দুপুরে কেন ঢুকব বলুন!"
লোকটা আইডি কার্ড উল্টেপাল্টে দেখে বলল, "চাচাকে ডেকে নিয়ে আসি। তুমি নড়বে না।"
যাক! তুমি করে বলছে অবশেষে!
(চলবে)
0 মন্তব্যসমূহ