শেষ বিকেলের মেয়ে ।বাংলা বই রিভিউ। তানজিলা আফরিন❤❤

বইঃ- শেষ বিকেলের মেয়ে
লেখকঃ- জহির রায়হান
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ- ৭৩


কাসেদ। কেরানির পদে চাকরী করে আয় করা স্বল্প বেতনে মা এবং দুঃসম্পর্কের এক বোনকে নিয়ে তার সংসার। বিয়েথা করেনি বলে কাসেদের মায়েরও অন্য মায়েদের মতোই খুব শখ, তিনি তার ছেলের বৌকে দেখে যাবেন। জাহানারা মেয়েটিকে ছেলের বৌ হিসেবে পাওয়ার জন্য মনেমনে তিনি ভালোই ব্যাকুল। কাসেদের নিজের মনেও সর্বক্ষণ জাহানারার বাস। জাহানারার সূত্র ধরেই কাসেদের সঙ্গে পরিচয় হয় শিউলি নামের হাসিখুশি এক মেয়ের সাথে। ব্যক্তিগতভাবে উপন্যাসের শিউলি চরিত্রটিকে আমার কাছে নিতান্তই "ঠুনকো ব্যক্তিত্বসম্পন্না" মনে হচ্ছিলো। যদিও গল্পের নায়ক কাসেদের কাছে শিউলিকে কোনো এক সময়ে উঁচুমনা মনে হয়েছিলো। 
যাইহোক, কাসেদ কোনোভাবেই জাহানারাকে তার মনের কথাগুলো বলতে পারছিলো না। ওদিকে শিউলির সাথে মেলামেশা নিয়ে জাহানারার মনেও কাসেদ-শিউলির সম্পর্ক নিয়ে ভুল ধারনা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে, গল্প শেষ করার পরেও আমি জাহানারার 'মনের মানুষ' কে ছিল- প্রশ্নের সমাধান পাইনি। কাসেদ? নাকি সেই যুবক, যিনি জাহানারার সেতার মাস্টার? 
.
একটি প্রচ্ছন্ন চরিত্র হলো, কাসেদের সহকর্মীর মেয়ে। বিকেলবেলার শেষ রঙা গায়ের রঙের এই মেয়েটির উপর কাসেদের খুবই হালকা এক ধরণের আকর্ষণ ছিলো। মেয়েটিকে পারিপার্শ্বিক চরিত্র হিসেবে রেখে এবং অফিসের বড় সাহেবকে কেন্দ্র করে সমাজের একটি গুরুত্ববহ দিক তুলে ধরেছেন লেখক জহির রায়হান। এককথায় সেই দিকটিকে উল্লেখ করা যায় এভাবে- শুধুমাত্র ধনসম্পদ, প্রতিপত্তিই মানুষের সুখ আনতে পারে না। প্রকৃত শান্তি পেতে জীবনসঙ্গীর সাথে মানসিক মিল এবং বোঝাপড়া থাকা একান্ত দরকার।
.
শেষমেশ আসছি দুটি মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। 
কাসেদের দুঃসম্পর্কের বোন নাহার। নাহার খুবই শান্ত, ধীর, স্বল্পভাষী মেয়ে। পুরো গল্পে নাহারের সংলাপ সংখ্যা সীমিত। 
সালমা। কাসেদের খালাতো বোন। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বেড়ে ওঠা, সারাক্ষণ ঝগড়া/তর্কে মেতে থাকা সালমা এবং কাসেদ সালমার বিয়ের পরে আলাদা হয়ে যায়। দুজনই দুজনের জন্য দুর্বল থাকা সত্ত্বেও, কাসেদের জন্যে সালমার মানসিক দুর্বলতা ছিল অনেক। পালানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলো সালমা। তবে পালিয়েছিলো কিনা, তা জানার জন্য তো বইটা আছেই।
.
পার্সোনাল রেটিংঃ- ৪/৫
ব্যক্তিগত কথনঃ- কাসেদ চরিত্রটা নিজেই ঘোলাটে। জাহানারার প্রতি অল্প বিরূপ হলেই কাসেদ তাকে তুলনা করে শিউলি/সালমার সাথে। আবার শিউলির ক্ষেত্রেও তাই। এছাড়া, কাসেদ সকলের প্রতিই দুর্বল ছিল বলা যায়। যদিও দুর্বলতার মাত্রাটা জাহানারার প্রতিই ছিলো সবচেয়ে বেশী এবং গভীর। অথচ, শেষে কিনা এমন একটা ব্যাপার হলো, যেটা মানতেই পারলাম না।
শিউলিকে আমার কাছে মনে হচ্ছিলো, "ঘেঁষে গিয়ে মেশা" ধরনের। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে সে অজান্তেই নিয়ে যায় অন্যকিছুতে। আর একারণেই শিউলিকে আমি বলেছিলাম "ঠুনকো ব্যক্তিত্বসম্পন্না"। 
আর জাহানারাকে আরো ঘোলাটে মনে হচ্ছিলো। উপন্যাসে জাহানারার মানসিক কোনো অবস্থা তার দিক থেকে ব্যাখ্যা করা হয়নি বলেই হয়তো আমি বুঝিনি। 
পরিশেষে, উপন্যাসের এন্ডিংটা কেমন যেন হুট করেই হয়ে গেলো। এন্ডিংটা পছন্দ হয়নি, অন্যরকম হলে ভালো লাগতো হয়তো। 
তবে লেখকের চিন্তাভাবনার সাথে পাঠকের চিন্তাভাবনা গুলিয়ে ফেলা বোকামি। লেখক যেভাবে উত্তম ভেবেছেন, সেভাবেই লিখেছেন।
#Happy_reading.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ